আজকে আমরা আলোচনা করব আপনাদের মাঝে কিভাবে জমি পরিমাপ করা হয় এটা নিয়ে। জমি পরিমাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, বিশেষ করে জমি কেনাবেচা, নির্মাণ কাজ বা কৃষি কাজের ক্ষেত্রে। জমি পরিমাপের সঠিকতা নির্ভর করে কী ধরনের জমি, কতটা বড় এবং কোন উদ্দেশ্যে পরিমাপ করা হচ্ছে তার উপর।
আমরা অনেকেই জমির পরিমাপ করতে চাই কিন্তু জমির পরিমাণ বের করার নিয়ম না জানার কারনে জমি পরিমাপ করতে পারি না। আমরা আজকে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিব।
বাংলাদেশের জমির পরিমাপ পদ্ধতি, নিয়ম ও সূত্র
জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে জমি পরিমাপ এর নিয়মগুলো বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জটিলতা এড়ানোর জন্য প্রায় ই জমি পরিমাপ করা প্রয়োজন হয়ে থাকে। জমি পরিমাপ করতে জমি পরিমাপ এর বিভিন্ন একক যেমন – কাঠা, বিঘা,একর এবং হেক্টর এর সাথে নিজেকে পরিচিত করতে হবে। এই সম্পর্কে ধারণা আপনাকে বিভিন্ন ইউনিটের তুলনা ও কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে, সম্ভাব্য বিরোধ প্রতিরোধ করবে। সম্ভাব্য সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য উন্নয়নের আগে সঠিক ভাবে জমি পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমি পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি
ভূমি পরিমাপ পদ্ধতি অঞ্চল এবং দেশের মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে। কিছু এলাকাতে নিদিষ্ট প্রবিধান এবং নিয়মের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যবহৃত পদ্ধতি নির্বিশেষে, অন্তর্নিহিত সূত্র একই থাকে। অনেক দেশে, সরকার নথিপত্র সহ ভূমি – সম্পর্কিত কার্য কলাপের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। দুটি প্রধান সিস্টেম আছে যথা- শতাংশ ভিত্তিক গণনা এবং সংখ্যাভিত্তিক গণনা। সিস্টেম গুলী জমির জন্য ব্যবহারকৃত পরিমাপের ইউনিট গুলো ব্যবহার করে
শতাংশ ভিত্তিক গণনায় জমিকে একশত ভাগে ভাগ করা হয়, যাকে বলা হয় এক শতাংশ। এই পদ্ধতিতে উচ্চতর একক হলো কাঠা,বিঘা ও একর। 20 কাঠা সমান এক বিঘা ও 3 বিঘা সমান এক একর। এই পরিমাপ স্কিমটি আনিষ্টানিক ভাবে অনুমোদিত ও স্ট্যান্ডার্ড পরিমাপ হিসেবে গৃহিত। আপনার নিদিষ্ট এলাকায় জমি পরিমাপ সংক্রান্ত আপ টু ডেট এবং সঠিক তথ্য পেতে স্থানীয় পেশাদার দের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
শতাংশ জমি পরিমাপ এর নিয়ম
জমি পরিমাপ এর একক হিসাবে শতাংশ অনেক ব্যবহৃত হয়। 1 শতাংশ মানে হলো 100 বর্গ ফুট। জমি পরিমাপ করার সময় খুব সহজেই বর্গফুটে জমি পরিমাপ করে শতাংশের মাধ্যমে বের করা যায়।
জমি মাপার পদ্ধতি অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আমাদের দেশে জমি পরিমাপ করার জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যথা:
- চেইন পদ্ধতি
- ফিতা পদ্ধতি
চেইন ( গান্টার শিকল) পদ্ধতি
ভূমি পরিমাপ সঠিক এবং সহজ করার জন্য ইংরেজ বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তাকে গান্টার শিকল বলা হয়ে থাকে। ভূমি পরিমাপ করার জন্য অনেক বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে গান্টার শিকল পদ্ধতি। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরনের শিকল আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারে জমি মাপের এই পদ্ধতিকে নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। বাংলাদেশের জমি পরিমাপের জন্য জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হচ্ছে গান্টার শিকল পদ্ধতি। শতক,একর ও মাইলষ্টোন বসানোর জন্য এই পদ্ধতি অনেক উপযোগী। গান্টার শিকলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০.৩১ মিটার বা ৬৬ ফুট। এই শিকলটি ১০০ টি ক্ষুদ্রভাগে বিভক্ত। এই শিকলের প্রতি ভাগকে লিংক বা জরিপ বলা হয়। গান্টার শিকলে ১০ লিংক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পরপর নস স্থাপন করা হয়। চেইন বা শিকলের একক হচ্ছে লিংক। এক শিকলে একশত লিংক থাকে। সেই অনুসারে হিসাব গুলো নিচে দেওয়া হলো—
- 1 লিংক = 7.9 ইঞ্চি
- 05 লিংক = 3 ফুট 3.6 ইঞ্চি
- 10 লিংক = 6 ফুট 7.2 ইঞ্চি
- 15 লিংক = 9 ফুট 10.8 ইঞ্চি
- 20 লিংক = 13 ফুট 2.4 ইঞ্চি
- 25 লিংক = 16 ফুট 6 ইঞ্চি
- 40 লিংক = 26 ফুট 4.8 ইঞ্চি
- 50 লিংক = 33 ফুট
- 100 লিংক = 66 ফুট
- 100 লিংক = 1 গান্টার বা 1 চেইন
- 1000 বর্গ লিংক = এক শতক
- 100000 বর্গ লিংক = এক একর
ফিতা দিয়ে জমি মাপার নিয়ম
বাংলাদেশে জমি মাপার সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভুমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমিন,সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তি গন জমি পরিমাপ করার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভুমির পরিমান কম হলে ফিতা এবং বেশি হলে চেইন ব্যবহার করাই সুবিধাজনক। ফিতা দিয়ে জমি মেপে এর বর্গগজ বা বর্গফুট বের করে জমি পরিমাপ করা হয় বলে একে ফিতা পদ্ধতি বলে।
ফিট স্কেল চেনার উপায়
যে স্কেল এর 1 ইঞ্চি 330 ফুট এটি ফিট স্কেল। ফিট স্কেলে লেখা থাকে 1” = 330’। এই স্কেল দিয়ে নক্সা পরিমাপ করলে উভয় পাশে প্রতি ক্ষুদ্র 1 ঘর=10 ফুট ধরা হবে। যে সকল ম্যাপ 16” = 1 মাইল স্কেলে তৈরি সে সকল ক্ষেত্রে। প্রতিটি ক্ষুদ্র 1 ঘর = 2 ফুট হবে, যে সকল ম্যাপ 80”=1 মাইল স্কেলে তৈরি। এগুলো সাধারণত ঢাকা শহরে বা বি আর এস নক্সা 80”= 1 মাইল মৌজা ম্যাপ হয়ে থাকে। 1 ঘর 2 ফুট ধরতে হয় এই সকল ম্যাপ পরিমাপের জন্য। বর্গফুট হিসেবে জমি মাপার হিসাব নিচে দেওয়া হলো:
- 1 একর = 43560 বর্গফুট = 4840 বর্গগজ
- 1 বিঘা = 1613 বর্গগজ =14520 বর্গফুট
- 1 কাঠা = 80.16 বর্গগজ = 721.46
- 1 বিঘা = 1613 বর্গগজ =14520 বর্গফুট
- 1 ছটাক = 5.01 বর্গগজ = 45.09 বর্গফুট
- 1 বর্গমিটার = 1.196 বর্গগজ = 10.7 বর্গফুট
জমি পরিমাপ এর সূত্র
প্রথমে জমি খন্ডের প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য কত ফুট তা বের করে, জমির চার দিকের মাপ সমান না হলে প্রস্থ ও দৈর্ঘ্যের গড় বের করতে হবে। তারপর দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্তের গুনফলেকে ৪৩৫.৬ দ্বারা ভাগ করতে হবে। এতে যা বের হবে, সেটাই জমির পরিমাণ (শতাংশ)।
জমি পরিমাপের একক
জমি পরিমাপের একক গুলো হলো – শতাংশ,কাঠা,বিঘা,একক,হেক্টর। যেমন: কোনো জমির প্রস্থ ৪০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট হলে উক্ত জমির পরিমাণ হবে ২০০০ বর্গফুট। এইভাবেই প্রয়োজন অনুযায়ী হিসাব করে বের করতে হবে জমির পরিমাণ।
- শতাংশ : 1 শতাংশ = 435.6 বর্গফুট। 1 বর্গফুট হলো এক ফুট জমি। সুতরাং একটি জমির প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য গুন করে যদি 435.6 বর্গফুট হয় তাহলে ওই জমির পরিমাণ 1 শতাংশ হবে।
- কাঠা: 1 কাঠা = 1.65 শতাংশ। সুতরাং কাঠা শতাংশ থেকে বড় জমি পরিমাপের একক।
- বিঘা: 1 বিঘা = 33 শতাংশ এবং 1 বিঘা = 20 কাঠা
- একর: 1 একর = 100 শতাংশ
- হেক্টর : 1 হেক্টর = 247 শতাংশ।
জমি পরিমাপ এর কিছু তথ্য
- 1 লিংক = 7.92 ইঞ্চি
- 1 লিংক = . 66 ফুট
- 100 লিংক = 1 চেইন
- 1 চেইন = 66 ফুট
- 1 চেইন = 22 গজ
- 12 ইঞ্চি = 1 ফুট
- 18 ইঞ্চি = 1 হাত
- 36 ইঞ্চি = 2 হাত / 1 গজ / 3 ফুট
- 1 বর্গ চেইন = 10 শতাংশ
- 10 বর্গ চেইন = 1 একর
- 1000 বর্গ লিংক = 1 শতাংশ
- 100000 বর্গ লিংক = 1 একর
- 193.6 বর্গ হাত = 1 শতাংশ
- 19360 বর্গ হাত = 1 একর
- 48.40 বর্গ গজ = 1 শতাংশ
- 4840 বর্গ গজ = 1 একর
- 435.60 বর্গ ফুট = 1 শতাংশ
- 43560 বর্গ ফুট = 1 একর
- 100 শতাংশ = 1 একর
যেভাবে আমিন জমি মাপে: সরকারি মাপে 33 শতাংশ = 20 কাঠা = 1 বিঘা এবং 1.65 শতাংশ = 1 কাঠা। সরকারি আমিন দিয়ে জমি মাপাতে চাইলে আগে এসি ল্যান্ড এর কাছে আবেদন করতে হতো এবং এখন ইউপি বা পৌরসভার আমিন দিয়েই মাপাতে হয়। আমিনের ম্যাপে একটা চারকোনা জায়গার মাপে চারপাশে 54.4” এবং 56.1” দেওয়া আছে । রিকুজিশন দিয়ে রাখতে হয় আমিন এর জন্য আগেই এবং ফি বাবদ 3000 টাকা পযন্ত নিয়ে থাকে।
ভূমি জরিপে সর্বাধিক ব্যবহৃত জমি পরিমাপ এর একক হলো শতাংশ এবং কাঠা।
আরও জানুনঃ
FAQ
জমি পরিমাপ কেন করা হয়?
জমি কেনাবেচা, নির্মাণ কাজ, কৃষি কাজ, কর নির্ধারণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে জমি পরিমাপ করা হয়।
জমি পরিমাপের জন্য কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়?
চেইন, টেপ, ইলেকট্রনিক সার্ভেয়িং যন্ত্রপাতি (Total Station, GPS ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়।
জমি পরিমাপের এককগুলো কী কী?
বাংলাদেশে শতাংশ, কাঠা, বিঘা, একর ইত্যাদি একক ব্যবহার করা হয়।
জমি পরিমাপের সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ, আবহাওয়া বিবেচনা করা, দুইজন ব্যক্তির সহযোগিতা নেওয়া ইত্যাদি।