পোরসভাতে বাড়ি বানাতে গেলে চারপাশে কয়টুকু জায়গা ছাড়তে হবে

পোরসভাতে বাড়ি বানাতে গেলে চারপাশে কয়টুকু জায়গা ছাড়তে হবে

Rate this post

পোরসভাতে বাড়ি নির্মাণ করার আগে, বেশ কিছু আইনগত এবং নকশাগত নিয়মের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাড়ির চারপাশে কেমন জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এই জায়গা ছাড়ার নিয়ম নির্ধারণ করে পোরসভা বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, যা স্থানীয় অবকাঠামো এবং পরিবেশের উপযুক্ততার জন্য আবশ্যক। চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে বাড়ি নির্মাণ করা শুধু আইনি প্রয়োজনীয়তা নয়, এটি বাসস্থানের নিরাপত্তা, বায়ুপ্রবাহ এবং অন্যান্য সুবিধার জন্যও জরুরি।

পৌরসভায় বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে চারপাশে ফাঁকা রাখার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তাগুলো স্থানীয় আইন এবং বিল্ডিং কোডের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের জন্য কিছু সাধারণ দিকনির্দেশনা রয়েছে।

বাড়ির চারপাশে ফাঁকা রাখার নিয়ম:

বাড়ির চারপাশে কতটুকু ফাঁকা রাখতে হবে তা স্থানীয় আইন নির্ধারণ করে। সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়:

  • সামনের অংশ (ফ্রন্ট সেটব্যাক): প্রধান রাস্তার সাথে বাড়ির সামনে ৫-১০ ফুট ফাঁকা রাখা প্রয়োজন হতে পারে।
  • পেছনের অংশ: পেছনে ৫-৮ ফুট ফাঁকা রাখতে হতে পারে।
  • দুই পাশ: পাশের রাস্তার কাছাকাছি হলে ৩-৫ ফুট এবং অন্য পাশে ২-৩ ফুট ফাঁকা রাখতে হতে পারে।

উল্লেখ্য: নির্ধারিত নিয়ম স্থানীয় পৌরসভার উপর নির্ভরশীল। তাই নির্দিষ্ট এলাকার জন্য পৌরসভা থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন।

নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • জমির খতিয়ান ও পর্চা।
  • জমির মিউটেশন সার্টিফিকেট।
  • জমির নকশা (CAD বা ম্যানুয়াল ড্রাফট)।
  • পৌরসভার অনুমতিপত্র।
  • প্রকৌশলীর সাইন করা ডিজাইন।

পোরসভাতে বাড়ি বানাতে বিস্তারিত তথ্য

  • জমির ধরন নির্ধারণ: প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে জমিটি কোন ধরনের (বাসস্থান, বাণিজ্যিক, বা কৃষি)। বাসস্থান নির্মাণের জন্য জমির ধরন পরিবর্তন বা অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে।
  • প্ল্যান অনুমোদন: পৌরসভায় বাড়ি নির্মাণের জন্য প্ল্যান অনুমোদন করানো বাধ্যতামূলক। স্থপতি বা প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি নকশা তৈরি করে তা পৌরসভায় জমা দিতে হয়।
  • পৌরসভার নির্ধারিত ফি: প্ল্যান অনুমোদনের জন্য একটি নির্ধারিত ফি দিতে হয়। এই ফি জমির আকার, নির্মাণের ধরন, এবং এলাকার উপর নির্ভর করে।
  • পরিবেশের সুরক্ষা: বাড়ি নির্মাণে স্থানীয় পরিবেশের উপর কোনো ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি। গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।
  • নির্মাণ পরিদর্শন: পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। অনুমোদিত নকশার বাইরে কিছু নির্মাণ করা হলে তা অবৈধ বলে গণ্য হতে পারে।
  • ব্যবহার উপযোগিতা সনদ: নির্মাণকাজ শেষে বাড়িটি ব্যবহারযোগ্য কিনা তা যাচাইয়ের জন্য পৌরসভা থেকে ব্যবহার উপযোগিতা সনদ (Occupancy Certificate) নিতে হবে।
  • প্রতিবন্ধী সুবিধা: যদি বাড়িটি একটি বহুতল ভবন হয়, তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেমন: হুইলচেয়ার বা লিফট।
  • সোলার প্যানেল স্থাপন: পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের অনুমতি রয়েছে। এটি বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সাহায্য করে।

পোরসভাতে বাড়ি বানানোর আইন ও বিধিনিষেধ:

পৌরসভায় বাড়ি নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আইন এবং বিধিনিষেধ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। নিচে এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

  • নকশার অনুমোদন:
    • নির্মাণ কাজ শুরুর আগে পৌরসভার কাছ থেকে নকশা অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদিত নকশা ছাড়া নির্মাণ কাজ শুরু করলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
  • সীমারেখা মেনে চলা:
    • জমির চারপাশে নির্ধারিত পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে।
    • ফ্রন্ট, ব্যাক, এবং পাশের ফাঁকা জায়গার পরিমাণ স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত।
  • প্রতিবেশীর অধিকার:
    • বাড়ি নির্মাণে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে প্রতিবেশীর বাড়ি বা জমির কোনো ক্ষতি না হয়।
    • নির্মাণের শব্দ বা ধুলার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • পরিবেশ সংরক্ষণ:
    • গাছপালা কাটার ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
    • নির্মাণে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়।
  • উচ্চতা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ:
    • বাড়ির উচ্চতা স্থানীয় আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
    • বিমানবন্দর বা বিশেষ এলাকার কাছাকাছি বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চতা নিয়ে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ থাকতে পারে।
  • পানির নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ:
    • বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
    • প্রতিবেশী বা রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
  • ইলেকট্রিক সংযোগ ও নিরাপত্তা:
    • বৈদ্যুতিক সংযোগ নেওয়ার আগে অনুমোদন নিতে হবে।
    • নির্মাণকাজে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • পৌরসভার পরিদর্শন:
    • নির্মাণ চলাকালীন সময়ে পৌরসভার কর্মকর্তারা পরিদর্শন করতে পারেন।
    • অনুমোদিত নকশার বাইরে কিছু নির্মাণ হলে তা বন্ধ করা হতে পারে।
  • অবৈধ নির্মাণ:
    • অনুমোদনহীন বা নকশার বাইরে নির্মিত বাড়ি পৌরসভা কর্তৃক ভেঙে ফেলা হতে পারে।
    • এর জন্য অর্থদণ্ডের ব্যবস্থাও থাকতে পারে।
  • ব্যবহার উপযোগিতা সনদ (Occupancy Certificate):
  • নির্মাণ শেষে বাড়িটি বাসযোগ্য কিনা তা যাচাই করার জন্য পৌরসভা থেকে সনদ নিতে হবে।
  • এই সনদ ছাড়া বাড়ি ব্যবহার করা আইনত নিষিদ্ধ।

এই আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলা না হলে নির্মাণ কাজ বন্ধ হতে পারে বা জরিমানা গুণতে হতে পারে। তাই বাড়ি নির্মাণের আগে এবং চলাকালীন সময়ে স্থানীয় পৌরসভার সাথে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট নিয়মগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

  • বাড়ি নির্মাণের সময় প্রতিবেশীদের অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • ইলেকট্রিক এবং পানির সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে।

উপযুক্ত পরামর্শ:

পৌরসভার আইন ও বিধিনিষেধের বিষয়ে পরামর্শের জন্য একজন অভিজ্ঞ স্থপতি বা আইনজীবীর সাহায্য নিন। স্থানীয় পৌরসভা অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।

বাড়ির উচ্চতার সীমাবদ্ধতা:

পৌরসভা আইন অনুযায়ী বাড়ির উচ্চতা নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে। সাধারণত এটি এলাকাভেদে ভিন্ন হয় এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই সীমা কম হতে পারে।

অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমানোর জন্য বাড়িতে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক।

  • ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার।
  • জরুরি নির্গমন পথ।
  • অ্যালার্ম ব্যবস্থা।

বাড়ি নির্মাণের আগে স্থানীয় আইন ও নিয়মগুলো ভালভাবে বোঝা এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশে ফাঁকা রাখার নিয়ম মেনে চললে ভবিষ্যতে কোনো আইনগত জটিলতায় পড়তে হবে না।

আরও জানুনঃ

FAQ

১. বাড়ির চারপাশে কতটুকু ফাঁকা রাখতে হবে?

চারপাশে ফাঁকা রাখার নিয়ম স্থানীয় পৌরসভার আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সামনের দিকে ৫-১০ ফুট, পেছনে ৫-৮ ফুট এবং দুই পাশে ৩-৫ ফুট ফাঁকা রাখা বাধ্যতামূলক হতে পারে।

২. বাড়ি নির্মাণের জন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন?

জমির খতিয়ান, মিউটেশন সার্টিফিকেট, জমির নকশা, পৌরসভার অনুমতিপত্র, এবং প্রকৌশলীর সাইন করা ডিজাইন জমা দিতে হবে।

৩. পৌরসভার প্ল্যান অনুমোদনের ফি কত?

এই ফি জমির আকার, নির্মাণের ধরন, এবং এলাকাভেদে ভিন্ন হয়। স্থানীয় পৌরসভায় গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।

৪. বাড়ি নির্মাণের সময় কি কি আইন মানতে হবে?

প্রতিবেশীদের অসুবিধা না করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা, ইলেকট্রিক ও পানির সংযোগের জন্য অনুমতি নেওয়া, এবং পরিবেশের ক্ষতি না করা বাধ্যতামূলক।

বাড়ি নির্মাণের আগে স্থানীয় আইন ও নিয়মগুলো ভালভাবে বোঝা এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশে ফাঁকা রাখার নিয়ম মেনে চললে ভবিষ্যতে কোনো আইনগত জটিলতায় পড়তে হবে না। সেইসাথে সঠিক নকশা এবং নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করে একটি টেকসই ও নিরাপদ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব।