বর্তমান সময়ে ভোক্তাদের জীবনে ব্যাংক কার্ডের প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে ভ্রমণ, অনলাইন কেনাকাটা, ব্যবসায়িক লেনদেন সবই অনেক সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক কার্ড কোনটি? – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের এই নিবন্ধে দেশে প্রচলিত বিভিন্ন ব্যাংক কার্ডের সুবিধা, ফি, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হবে। বাংলাদেশের ছাত্র, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণপিপাসুদের কথা বিবেচনা করে কার্ডের বৈশিষ্ট্যসমূহ সহজভাবে ব্যাখ্যা করব। পাশাপাশি অনলাইন পেমেন্ট, বিদেশ ভ্রমণ ও ক্যাশব্যাক সংক্রান্ত গভীর তথ্য এবং তুলনামূলক টেবিলও থাকবে।
ব্যাংক কার্ডের ধরন: ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক ব্যাংক কার্ডের মূল তিনটি ধরন কী কী:
- ক্রেডিট কার্ড: ব্যাংক আপনার নামে নির্দিষ্ট লিমিট ধরে শর্তসাপেক্ষে স্বল্পমেয়াদী ঋণ দেয়। পরে মাসের নির্ধারিত তারিখে বিল পরিশোধ করতে হয়, নাহলে সুদ (ইন্টারেস্ট) ধার্য হয়। ক্রেডিট কার্ড সাধারণত বাণিজ্যিক গ্রাহক, উচ্চ আয়ের ব্যক্তি বা যারা বড় করে ভ্রমণ এবং কেনাকাটা করেন তাদের জন্য উপযোগী। অনেক ক্রেডিট কার্ডেই পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক ও ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলার বেনিফিট থাকে।
- ডেবিট কার্ড: সরাসরি আপনার ব্যাংক হিসাবের সাথে যুক্ত একটি কার্ড। এর মাধ্যমে আপনার নিজের হিসাবের টাকা দিয়ে কেনাকাটা করা হয়। বিদেশী মুদ্রায় লেনদেন করলে আদানপ্রদান চার্জও প্রযোজ্য হতে পারে। যেহেতু ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় না, তাই সুদ থাকে না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বড় ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দেশব্যাপী বিস্তৃত এটিএম নেটওয়ার্ক এবং অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে। কম খরচে দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য ডেবিট কার্ড বেশি ব্যবহার্য।
- প্রিপেইড কার্ড: ভ্রমণ বা উপহারস্বরূপ পূর্বে টাকা লোড করে ব্যবহৃত কার্ড। সাধারণত এক বা দুই মুদ্রায় পাওয়া যায়, যেমন ডাচ-বাংলার নেক্সাস ট্রাভেল কার্ডে BDT ও USD দুটোই থাকতে পারে। ট্রাভেল কার্ড হিসেবে প্রিপেইড কার্ড বিদেশ ভ্রমণের সময় ভিসা/মাস্টার স্বীকৃত পয়েন্টে সুবিধা দেয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভ্রমণ ভাতা নিয়ম মেনেই লোড করা যায়। প্রিপেইড কার্ডের অন্যতম সুবিধা হল এটিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা লাগবে না (যেমন সিটিজেন্স ব্যাংকের কার্ড)। বাড়তি খরচ ছাড়াই সংরক্ষণযোগ্য হওয়ায় অনলাইন পেমেন্টেও সেগুলো ব্যবহার করা যায়।
প্রকারভেদ অনুযায়ী সুবিধা-বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝে নিলেন বলে ধরে নিচ্ছি; এখন দেখা যাক, কার্ড বাছাই করার সময় কী কী বিবেচনা করবেন।
কার্ড নেবার পূর্বে যে বিষয়গুলো দেখবেন?
ব্যাংক কার্ডের শর্ত, সুবিধা ও ব্যবহারে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা কার্ড বাছাই করার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে পারেন:
- বার্ষিক ফি ও চার্জ: অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি থাকে (যা প্রথম বছরে ছাড়ও পেতে পারেন)। ডেবিট/প্রিপেইড কার্ড সাধারণত বিনামূল্যে বা সামান্য ফি থাকে। বেনিফিটের তুলনায় ফি কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটি যাচাই করুন।
- সুদ ও লেট ফি: ক্রেডিট কার্ডে বিল সময়মতো পরিশোধ না করলে সুদ ধার্য হয়। ডেবিট/প্রিপেইডে সুদ থাকে না, তবে ওভারড্রাফট করলে অর্থপ্রদান করতে হতে পারে। লেট ফি এবং বিদেশী লেনদেন চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
- ইন্টারন্যাশনাল ব্যবহার: বিদেশে ভ্রমণ বা অনলাইন শপিংয়ের জন্য কার্ড ব্যবহার করলে, ডুয়াল কারেন্সি বা ভিসা-গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করুন। কিছু কার্ডে অতিরিক্ত বিদেশি লেনদেন চার্জ কম থাকে। বিশেষ করে ভ্রমণকালে চিপ ও পিন সাপোর্ট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি সুবিধা থাকলে তা মূল্যায়ন করুন।
- ক্যাশব্যাক ও রিওয়ার্ড: অনেক ক্রেডিট কার্ড কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক অথবা পয়েন্ট দেয়। যেসব কার্ডে নিয়মিত কেনাকাটায় বেশি রিওয়ার্ড থাকে, সেগুলো দৈনন্দিন ব্যয়ের ক্ষেত্রে লাভজনক হতে পারে। তবে ক্যাশব্যাকের শর্ত (যেমন মাসিক খরচের পরিমাণ) খেয়াল রাখুন।
- ঋণ সুবিধা ও EMI: বড় কেনাকাটার জন্য অনেক কার্ডে ইএমআই সুবিধা থাকে, অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিল একসঙ্গে পরিশোধ না করে দুই-চার মাসের কিস্তিতে দিতে পারেন। বড় ভোক্তা পণ্য ও ইলেকট্রনিকস কেনার ক্ষেত্রে এই সুবিধা কাজে লাগে।
- ব্যাংকের গ্রাহক সেবা ও নিরাপত্তা: অনলাইন পেমেন্ট নিরাপদ করার জন্য ব্যাংকগুলো ৩৭৭৭ OTP সিস্টেম চালু করেছে। লেনদেনের নোটিফিকেশন, নিরাপদ পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সেবাও দেখুন। কার্ড হারিয়ে গেলে বা অননুমোদিত লেনদেন হলে ব্যাংকের সেবা দ্রুত পাওয়া যায় কিনা, তাও গুরুত্বপূর্ণ।
এসব বিষয় মাথায় রেখে চলুন, বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় ব্যাংক কার্ডের তুলনা দেখে নেওয়া যাক।
সেরা ক্রেডিট কার্ড বাংলাদেশে
বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় কার্ডের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
ডাচ-বাংলা ব্যাংক (DBBL) নেক্সাস ভিসা/মাস্টার কার্ড
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের NEXUS ক্রেডিট কার্ড বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য এবং তা ঘরে বসেই অনলাইনে শপিং, হোটেল বুকিং বা বিমান টিকিট কাটতেও ব্যবহার করা যায়। এই কার্ডটির কিছু প্রধান সুবিধাঃ ৪৫ দিনের ইন্টারেস্ট ফ্রি লেনদেন বড় কেনাকাটার জন্য ইএমআই সুবিধা এবং বিদেশ ভ্রমণের জন্য এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা। এছাড়া ডাচ-বাংলার শীর্ষস্থানীয় কার্ডগুলোতে বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পিক-ড্রপ সার্ভিসের মত প্রিমিয়াম সুবিধাও আছে। তার সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং চার্জ স্ট্রাকচার স্বচ্ছ। তাই ব্যবসায়ী বা ঘুরতে বেড়ানো পেশাজীবীদের মধ্যে ডিবিবিএলের নেক্সাস কার্ড বেশ জনপ্রিয়।
সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম
সিটি ব্যাংক আমেক্স প্লাটিনাম কার্ডে এক্সক্লুসিভ ট্রাভেল ও লাইফস্টাইল বেনিফিট রয়েছে। যেমন প্রতি বছর ৬টি Priority Pass Lounge ভিসিট (প্রতিটি ১৩০০+ এয়ারপোর্টে কার্যকর) এবং অতিরিক্ত গেস্ট ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে নেওয়া যায়। এছাড়া ডাইনিং, হোটেল বুকিং, স্মার্টফোন কেনাকাটায় উল্লেখযোগ্য ক্যাশব্যাক এবং বোনাস পয়েন্ট প্রোগ্রাম থাকে। কার্ডধারীরা বছরে একবার ২৫,০০০ বোনাস পয়েন্ট এবং বিভিন্ন খাবার–আবাসন ছাড়ও পেতে পারেন। এসব সুবিধার জন্য সিটির এই কার্ডের বার্ষিক ফি তুলনামূলকভাবে বেশ (প্লাটিনাম সেগমেন্টে) কিন্তু উচ্চ-আয়ের গ্রাহক ও ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলিংদের মধ্যে এটি চাহিদাসম্পন্ন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বেঙ্গল (Standard Chartered)
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ভিসা এবং মাস্টার কার্ডগুলোতে আন্তর্জাতিক ইন্স্যুরেন্স, কনসিয়ার্জ সার্ভিস এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হয়। এই কার্ডগুলোর খরচ সীমা সাধারণত বেশি এবং দেশ-বিদেশে ভোগ্যতা ব্যাপক। অন্তর্ভুক্ত ফ্রি লাউঞ্জ ব্যবহারের জন্য আপনাকে কিছু বার্ষিক ফি রাখতে হতে পারে, তবে ব্যবসায়িক যাত্রী এবং অভিজাত গ্রাহকের মধ্যে এগুলো জনপ্রিয়।
ইস্টার্ন ব্যাংক (EBL) ক্রেডিট কার্ড
ইস্টার্ন ব্যাংক কার্ড যেমন Aqua বা Nova তে দৈনিক লেনদেন সীমা বেশ উচ্চ এবং বিপুল আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এদের সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বিমানবন্দর লাউঞ্জ সুবিধা, এসি ডিসকাউন্ট (এয়ারলাইন বুকিং ডিসকাউন্ট) এবং স্পট ক্যাশব্যাক অফার। বার্ষিক ফি মাঝারি এবং লেনদেনের স্পষ্ট চার্জ স্ট্রাকচার থাকার কারণে ঘন ভ্রমণপ্রিয়তা সম্পন্ন ব্যবহারকারীদের কাছে EBL কার্ড উপযোগী।
ব্র্যাক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
ব্র্যাক ব্যাংক beginner-friendly কার্ড অফার করে, যেমন বিকাশিত ও সাশ্রয়ী গোল্ড কার্ড। এ কার্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য: সহজ আবেদন প্রক্রিয়া, তুলনামূলক কম বার্ষিক ফি এবং সহনশীল আন্তর্জাতিক লেনদেন চার্জ। ক্রেডিট লিমিট আদর্শভাবে নবীনদের জন্য থাকে এবং লয়্যালটি পয়েন্ট বা ভ্রমণ প্যাকেজ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। বাজেট সচেতন ভ্রমণকারী ও নিত্য নূন্যতম আয়ের গ্রাহকদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড আকর্ষণীয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কার্ড
অন্যান্য ব্যাংক যেমন প্রাইম ব্যাংক এর Dual Currency কার্ডেও বিশ্বব্যাপী লেনদেন সুবিধা এবং আয়কর ফেরত, ডাইনিং ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB) ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক (DBBL) – উভয়ই ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দেয় এবং বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই কার্ডের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করে।
উপরোক্ত কার্ডগুলো নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অনেক ব্যবহারকারী বলেছেন যে, ভ্রমণ এবং অনলাইন কেনাকাটায় সিটি ব্যাংক ও ডিবিবিএল কার্ডে তারা খুশি। তবে কিছু ভোক্তা সতর্ক করেন যে, লুকানো চার্জ এবং বিনিময় হার মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে।
কার্ড (ব্যাংক) | বার্ষিক ফি (প্রায়) | প্রধান সুবিধা | উপযুক্ত গ্রাহক |
ডিবিবিএল Nexus Visa Signature | প্রথম বছর ফ্রি, পরের বছর ~৳৮,০০০ | প্রায় ১,৩০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ; ৪৫ দিনের সুদমুক্ত লেনদেন; স্বাস্থ্য পরীক্ষা; EMI পরিষেবা | ভ্রমণকারী, উচ্চ আয়ের পেশাজীবী |
সিটি ব্যাংক AmEx Platinum | ~৳১২,০০০ ও তার বেশি | ৬টি ফ্রি পাস লাউঞ্জ ভিসিট (Priority Pass); ভ্রমণ ও ডাইনিং ডিসকাউন্ট; বোনাস পয়েন্ট | অভিজাত ভ্রমণকারী, উৎসবগ্রাহী |
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড Platinum | বেশি (ফি) | উচ্চ ক্রেডিট লিমিট; বিশ্বব্যাপী ইন্স্যুরেন্স; ক্যাশব্যাক ও কনসিয়ার্জ | উচ্চ-আয়ের ব্যাক্তি |
ইস্টার্ন ব্যাংক Aqua | মাঝারি | উচ্চ লেনদেন সীমা; বিমানবন্দর লাউঞ্জ; এয়ারলাইন ডিসকাউন্ট | নিয়মিত ব্যবসায়ী, পর্যটক |
ব্র্যাক ব্যাংক Gold/Dual Currency | কম (বাজেট ফ্রেন্ডলি) | সাশ্রয়ী ফি; আন্তর্জাতিক লেনদেন ক্ষমতা; ক্যাশব্যাক পয়েন্ট | প্রথমবারের গ্রাহক, বাজেট-সচেতন |
ক্রেডিট কার্ডের তুলনামূলক চার্টসেরা ডেবিট কার্ড বাংলাদেশে
ডেবিট কার্ড দৈনন্দিন লেনদেনে ব্যবহার হয়। এখানে কয়েকটি ডেবিট কার্ড এবং তাদের সুবিধা তুলে ধরা হলো:
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক এটিএম কার্ড: সারাদেশে ৪৫০০+ এটিএম বুথে (ডিবিবিএল ও রকেট) কাজ করে। কোন সুদ ছাড়াই অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স থেকে লেনদেন করা যায়। অনলাইনে কেনাকাটা এবং বিল পরিশোধও এই কার্ড দিয়ে সহজে করা যায়। ক্রেডিট কার্ডের মতো ক্যাশব্যাক সুবিধাও দেয়। আন্তর্জাতিক ব্যবহারযোগ্য (বৈধ ইএমভি চিপ সাপোর্ট) এবং নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমে ব্যবহৃত।
- সিটি ব্যাংক মাষ্টারকার্ড ডেবিট: বড়ো শহরে ব্যাপক এটিএম নেটওয়ার্ক এবং বিশ্বব্যাপী মাষ্টারকার্ড পেমেন্ট গেটওয়ে গ্রহণযোগ্যতা। কোন মাসিক ফি নেই। অনলাইন ব্যাংকিং ও ফোন ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া হয়।
- ইস্টার্ন ব্যাংক ডেবিট (EBL Classic/Aqua): দেশের এ ব্লক-সব শাখায় এটিএম ব্যবস্থাপনা, বিদেশ মানসম্মত লেনদেন, ও অনলাইন শপিংয়ে ব্যবহার উপযোগী। অনেক সময় অংশীদার প্রতিষ্ঠানে ডিস্কাউন্ট অফার থাকে।
- প্রাইম ব্যাংক ডেবিট: প্রতি মাসে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন মার্কেট প্লেসে ক্যাশব্যাক সুবিধা। ইউসিউসি (EMV) নিরাপত্তা। বাংলাদেশের সকল বড় এটিএম নেটওয়ার্ক যুক্ত।
সাধারণভাবে, যেকোনো ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দিয়ে দেশের যে কোনও দোকান, অনলাইন মার্কেটিং সাইট ও এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়। বিদেশ ভ্রমণে এই কার্ড দিয়ে সরাসরি পেমেন্ট করা গেলে থাকে, তবে ভর্তুকি হারে বিদেশী লেনদেন চার্জ দিতে হতে পারে।
ব্যাংক | বার্ষিক ফি | এটিএম নেটওয়ার্ক | প্রধান বৈশিষ্ট্য |
ডিবিবিএল Nexus Debit | ফ্রি/সদ্য | ৪৫০০+ (ডিবি/রকেট এটিএম) | অনলাইনে পেমেন্ট, ইএমভি সাপোর্ট, ভালো ক্যাশব্যাক |
সিটি ব্যাংক ডেবিট | ফ্রি | ৫০০+ (বৃহত্তর এডি নেটওয়ার্ক) | উচ্চ নিরাপত্তা, বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, আধুনিক অনলাইন ব্যাংকিং |
ইস্টার্ন ব্যাংক ডেবিট | ফ্রি/সদ্য | ৪০০+ (ইবিএল এটিএম) | অনলাইন শপিং/পেমেন্ট, আরএমপি প্রযুক্তি, অফার ও ডিসকাউন্ট |
ব্যাংক এশিয়া ডেবিট | কম | ৩০০+ (বিআরএস এটিএম) | পিএমএস চিপ সুরক্ষা, সহজ অনলাইন পেমেন্ট, স্থানীয় নেটওয়ার্ক |
প্রাইম ব্যাংক ডেবিট | ফ্রি | ৪৫০+ (পিবিএল এটিএম) | ক্যাশব্যাক, ডবল কারেন্সি (টাকা+ ডলার), বিশেষ ইমপ্ল্যান্ট। |
উপরের তুলনা সাধারণ নির্দেশনা, ব্যাংকের নীতিমালায় পরিবর্তন হতে পারে।
জনপ্রিয় প্রিপেইড (ভ্রমণ) কার্ড
ভ্রমণ অথবা অনলাইন কেনাকাটার জন্য প্রিপেইড কার্ডও খুব কাজে দেয়। এগুলো মূলত ডুয়াল কারেন্সি অথবা একক কারেন্সি হতে পারে:
- ডিবিবিএল Nexus ভিসা ট্রাভেল কার্ড: ডুয়াল কারেন্সি (BDT/USD), ওয়ালেট থেকে অনলাইন রিচার্জযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রাভেল কোটা (প্রতি ব্যক্তি $2,500 ) অনুযায়ী লোড করা যায়। এটিএম এবং শপিং-এর জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়। কোনও ফরেন ট্রানজেকশন চার্জ হয় না অথবা অনেক কম।
- বেঙ্গল প্রিপেইড কার্ড: বিকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত এই কার্ড USD কারেন্সিতে থাকে এবং ভ্রমণের জন্য তৈরি। ভ্রমণ ভাতার অর্ন্তগর্ভী খরচের জন্য আদর্শ। ব্যবহার সহজ, নিরাপদ এবং কারেন্সি লক করা যায় না। (সরকারি নিয়ম মেনে) বিদেশে টাকা তোলার সুবিধা।
- সিটিজেন্স ব্যাংক প্রিপেইড কার্ড: কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই পাওয়া যায়। ফি কম, অনলাইনে কেনাকাটা ও বিদেশ ভ্রমণে ভিসা/মাষ্টারকার্ড নেটওয়ার্কে কাজ করে। পুরাতন তহবিল ফেরত নীতি সহজ। NFC সাপোর্ট আছে বলে যোগাযোগহীন পেমেন্ট করতে পারি ।
- ইস্টার্ন ব্যাংক প্রিপেইড: ভ্রমণ ও কর্পোরেট সেবা উভয়ের জন্য। ডুয়াল কারেন্সি বা USD একক। সীমিত চার্জ, বিদেশ ATM থেকে টাকা তুলতে পারবেন। অনেক বিকাশ চ্যানেলের মাধ্যমে রিচার্জের সুবিধা।
একটি তুলনা টেবিলে কিছু প্রিপেইড কার্ডের বৈশিষ্ট্য দেখুন:
কার্ডের নাম | কারেন্সি | বার্ষিক ফি | ব্যবহার/সুবিধা |
ডিবিবিএল Nexus ভিসা ট্রাভেল | BDT + USD (Dual) | ফ্রি প্রথম বছর | বিদেশ ভ্রমণ ও অনলাইন কেনাকাটা, ট্রাভেল কোটা অনুযায়ী লোড |
বেঙ্গল প্রিপেইড কার্ড | USD (Single) | ফ্রি | শুধুমাত্র বিদেশ ভ্রমণ, লোড ও রিফান্ড সহজ, ব্যাংক গ্রহীত সার্ভিস আছে |
সিটিজেন্স ভিসা প্রিপেইড | USD (Single) | ফ্রি | ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়া, 2,500 ডলারের কোটা, রিফান্ড সহজপ্রণালী |
ইস্টার্ন ব্যাংক ভিসা প্রিপেইড | BDT + USD (Dual) | মাঝারি | ভ্রমণ ভাতা / ব্যবসায়িক যাত্রা, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং ইন্টিগ্রেশন |
সিটি ব্যাংক One Experience (ই-কমার্স) | BDT (Single) | ফ্রি | শুধু বাংলাদেশ-ভিত্তিক অনলাইন কেনাকাটার জন্য, দ্রুত রিচার্জ, সীমিত লেনদেন |
নোট: ব্যাংকের কিস্তি, চালু ফিচার এবং চার্জ সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। কার্ড নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য দেখে নিন।
ভ্রমণ ও অনলাইন কেনাকাটায় কার্ডের ব্যবহার
বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। সাধারণত প্রতি বছর স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের জন্য $2,500, অন্যদের জন্য $5,000 পর্যন্ত ভ্রমণ ভাতা থাকে। এই পরিমাণের মধ্যে প্রিপেইড বা ডুয়াল কার্ডে টাকা লোড করা যায়।
ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড নিয়ে ভ্রমণের সময় কোটা বা অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে সমস্যার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। বিশেষ করে ডুয়াল কারেন্সি কার্ডে (যেমন DBBL, SCB, EBL কার্ড) BDT ও USD উভয় লেনদেন করতে পারেন। অর্থের বিনিময় হার সুবিধাজনক, তাই বড় পরিমাণের লেনদেন করতে হলে কারেন্সি রিবেলেন্সের চেয়ে কার্ড সুবিধাজনক।
অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ভিসা/মাস্টারকার্ড গ্রহনযোগ্য। নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকগুলো ওটিপি (OTP) প্রয়োজন করে। PayPal না থাকার কারণে ভ্রমণপথের বিদেশী ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করতে ভিসা/মাস্টার কার্ড কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, Daraz অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম Visa কার্ড দিয়ে ক্যাশব্যাক দেয়, এবং ভিসা-সহযোগিতায় কেব্রান্ডেড কার্ড চালু হয়েছে।
একজন অভিজ্ঞ ভ্রমণকারী মতামত দিচ্ছেন: “ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ট্রাভেল কার্ড নিয়ে যাওয়ায় বিমানে বসেই পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই বিল পরিশোধ করা গিয়েছিল, আর কারেন্সি বিনিময়ে অনেক সহজ ছিল”। অনলাইন শপিংতে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে সিটি ব্যাংকের এমেক্স কার্ডের ক্যাশব্যাক থেকে বেশ উপকৃত হয়েছেন এবং লাউঞ্জ ব্যবহারে ভ্রমণের মান বেড়েছে। তবে কেউ কেউ সতর্ক করেন যে কিছু কিছু কার্ড এ হিডের্ন চার্জ বেশি , সুতরাং কার্ড নেবার পূর্বে বিস্তারিত জেনে তার পর কার্ড নেওয়া উচিৎ।
ট্রাভেল কার্ডের জন্য টিপস
- বিদেশ ভ্রমণের আগে কারেন্সির বাজার দর পর্যবেক্ষণ করুন। ডলার লোড করার ক্ষেত্রে ফ্লাকচুয়েশন এড়াতে টাকা তুলবেন অনুকূল সময়ে।
- সম্ভাব্য ক্ষেত্রে Dual Currency কার্ড নিন, এতে ডলার/টাকা উভয় মানেই লেনদেনের সুবিধা পাবেন।
- ATM-থেকে টাকা তুলা এড়িয়ে চলুন, কারণ আন্তর্জাতিক এটি এম থেকে টাকা তুলার চার্জ ১০ থেকে ১৫ ডলার পযন্ত হয়ে থাকে।
- কার্ড হারালে বা চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংককে জানিয়ে ব্লক করে ফেলুন।
আরো জানুনঃ
- UCB Bank Credit Card Rewards Program Details | ইউসিবি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড রিওয়ার্ডস প্রোগ্রাম এর সকল তথ্য
- UCB Bank Mobile Banking App Details | UCB ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ
অন্যান্য ব্যবহারিক তথ্য ও সতর্কতা
- বিল পেমেন্ট ও সুদ: ক্রেডিট কার্ড বিল সময়মতো পরিশোধ করুন। বেশিরভাগ কার্ডে ৪৫ দিনের সুদমুক্ত পিরিয়ড থাকে। বিল না দিলে সুদ ও লেট চার্জ প্রযোজ্য হবে।
- সিকিউরিটি: কার্ডের পিন, OTP ও CVV কেউকে দেন না। অননুমোদিত লেনদেন দেখতে পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
- ক্যাশব্যাক হিসাব: কিছু কার্ড মাসিক বা ত্রৈমাসিক নির্দিষ্ট ব্যালেন্স বা লেনদেন পরিশোধে ক্যাশব্যাক দেয়। কার্ডের অফার পোর্টাল নিয়মিত চেক করুন।
- ডুয়াল কারেন্সি: একই কার্ডে BDT ও USD থাকলে বিদেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডলার খরচ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ডলার ব্যবহার করে ট্রাভেল ভাতা পূরণ করতে পারেন।
- বিলিং সাইকেল: প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময় (টাকার টাইটেম, লেট ফি) বিবেচনা করে কার্ড চালু করুন। ফি স্কিমে “লিমিটেড অফার” থাকলে আগে দেখে নিন।
- অনলাইন পেমেন্ট কার্ড: রূপালি ব্যাংকের নীতিতে নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করার কথা বলা হয়। (উদাহরণস্বরূপ: “নিরাপদ অনলাইন কেনাকাটার টিপস” – অন্য ব্যাংকেও একই ধরনের নির্দেশনা থাকে)।
FAQ
১. ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নেওয়ার কার্ড; বিল পরিশোধ না করলে সুদ ধার্য হয়। ডেবিট কার্ড আপনার নিজের হিসাবের টাকা খরচ করে, তাই সুদ লাগে না। ক্রেডিট কার্ড সাধারণত অধিক সুবিধাযুক্ত হলেও ফি বেশি এবং ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়। ডেবিট কার্ড দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য নিরাপদ ও সহজ।
২. বাংলাদেশের সেরা ক্রেডিট কার্ড কোনটি?
উত্তর: নির্দিষ্ট কোনো একটি সেরা বলতে সমস্যা, কারন সবব্যক্তি ভিন্ন। তবে ভ্রমণ ও প্রিমিয়াম সুবিধার জন্য সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ভিসা প্লাটিনাম জনপ্রিয়। বাজেট সচেতনদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কার্ড ভালো। কার্ড বাছার আগে বার্ষিক ফি, লেনদেন চার্জ ও প্রয়োজনীয় বেনিফিট যাচাই করুন।
৩. বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটার জন্য সেরা ব্যাংক কার্ড কি?
উত্তর: অনলাইন কেনাকাটা অধিকাংশ ব্যাংকের ভিসা/মাস্টারকার্ড সাপোর্ট করে। নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংক নেক্সাস ভিসা প্রিপেইড বা সিটি ব্যাংক এমেক্স জনপ্রিয়। এগুলো ২-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এবং ক্যাশব্যাক অফার দেয়। বাজারজাত পেমেন্ট গেটওয়েতে ব্যবহারের জন্য OTP-সাপোর্টেড কার্ড বেছে নিন।
৪. বিদেশ ভ্রমণে কোন ব্যাংক কার্ড সবচেয়ে উপযোগী?
উত্তর: বিদেশ ভ্রমণে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড (যেমন ডিবিবিএল নেক্সাস ভিসা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ডুয়াল কারেন্সি) সুবিধাজনক। এগুলোতে USD মুদ্রা থাকবে এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে চার্জ কম। এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ বা ট্রাভেল বীমার মত সুবিধা থাকলে তা প্লাস পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভ্রমণ কোটা মেনে USD লোড করে নিয়ে যাওয়া যায়।
৫. ব্যাংক কার্ডে ক্যাশব্যাক কিভাবে কাজ করে?
উত্তর: অনেক ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড কেনাকাটায় শতাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফেরত (ক্যাশব্যাক) দেয়। যেমন প্রতি মাসে ৩টি ক্যাশব্যাক অফারে আপনি কোনো খাতার কেনাকাটায় ২-৫% ক্যাশব্যাক পেতে পারেন। কার্ডের অফার কার্যক্রমে যোগ দেওয়া লাগতে পারে। নিশ্চিতভাবে জানার জন্য ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে উপযুক্ত ক্যাশব্যাক অফার চেক করুন।