বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনুদান প্রদান করে। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। এই প্রবন্ধে শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক অনুদানের ধরন, আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
আর্থিক অনুদানের প্রকারভেদ
১. উপবৃত্তি (Stipend Program)
মাধ্যমিক স্তর: ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ সাধারণত ৫০০-৭০০ টাকা।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তর: ১১তম ও ১২তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। নির্দিষ্ট CGPA অর্জন করলে এই উপবৃত্তি পাওয়া যায়।
২. মেধাবৃত্তি (Merit Scholarship)
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে: বোর্ড পরীক্ষায় উচ্চ ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের ট্যালেন্টপুল এবং সাধারণ গ্রেডে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তির পরিমাণ ৮০০-১,২০০ টাকা।
৩. উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষ অনুদান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। এতে মাসিক অর্থসহ বই ও শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য সহায়তা পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) স্কলারশিপ: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য এই অনুদান প্রদান করা হয়।
৪. বিশেষ ক্যাটাগরির অনুদান
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য: শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বই, শিক্ষা উপকরণ এবং যাতায়াত খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য: পাহাড়ি বা দারিদ্রপীড়িত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়।
মেয়েদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ: নারী শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য আলাদা উপবৃত্তি ও বৃত্তি প্রদান করা হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
১. অনলাইন আবেদন
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট সময়ে স্কলারশিপ ও অনুদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারীরা নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করতে পারেন। আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইট: shed.portal.gov.bd
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন
কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান আবেদন যাচাই করে তা শিক্ষা বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেন।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
আবেদনের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত নথিপত্র প্রয়োজন হয়:
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ।
- অভিভাবকের আয়ের সনদপত্র।
- সর্বশেষ পরীক্ষার নম্বরপত্র।
- বিদ্যালয় বা কলেজের প্রত্যয়নপত্র।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- অন্যান্য বৃত্তি সম্পর্কিত তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
সেবা ফি ও সময়সীমা
- সেবা ফি: বিনামূল্যে।
- সেবা প্রদানের সময়সীমা: সাধারণত ১৫০ কার্যদিবস।
know More:
FAQ
প্রশ্ন ১: কিভাবে জানতে পারি আমি কোন স্কলারশিপ বা অনুদানের জন্য যোগ্য?
উত্তর: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শিত তথ্য দেখে জানতে পারবেন।
প্রশ্ন ২: স্কলারশিপ পেতে কি CGPA দরকার?
উত্তর: হ্যাঁ, বেশিরভাগ স্কলারশিপের জন্য নির্দিষ্ট CGPA প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, মেধাবৃত্তির জন্য উচ্চ CGPA বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন ৩: আবেদন প্রক্রিয়ার সময়সীমা কতদিন?
উত্তর: সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া ১-২ মাস পর্যন্ত খোলা থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান তাদের শিক্ষাগত কার্যক্রমকে আরও সহজ এবং কার্যকর করে তোলে। এই অনুদান শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যার সমাধান করে না, বরং তাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করলে এবং সঠিকভাবে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে।
আমার একটা অনুদান চাই আমি খুব বড় একটা সমস্যার মাজে আছি