আজকে আমরা আলোচনা করব আপনাদের মাঝে জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পরে মূল দলিল পাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে। বাংলাদেশে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। জমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক দলিল এবং সময়মতো তাদের প্রাপ্তি অপরিহার্য।
আমরা অনেকেই ভাবি বা জানি যে দলিল থাকলেই জমির মালিক হওয়া যায়, কিন্তু বিষয় টা এই রকম না। আপনার কাছে দলিল থাকলেই যে আপনি জমির মালিক হয়ে যাবেন বিষয় টা তা নয়। তাই দলিল যার জমিও তার এই বিষয় টির উপর গুরুত্ব আরোপ করা যাবে না। আপনি কোনো জমির মালিকানা দাবি করলে আপনার কাছে কিছু প্রমাণ থাকতে হবে। এবং কিছু কাগজ পত্রও থাকা জরুরি।
জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
জমি রেজিস্ট্রেশন হল জমির মালিকানা রেকর্ড করার একটি আইনি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় একজন ক্রেতা বা মালিক জমি কেনার পরে বিভিন্ন ধরণের দলিল পূরণ করে এবং সরকারী অফিসে জমা দেয়। মূলত, জমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
জমির মালিক হতে হলে যা যা থাকতে হবে
কোনো জমির মালিক দাবি করতে হলে আপনার কাছে অবশ্য ই কিছু প্রমান থাকতে হবে। জমির মালিকানা দাবি করতে হলে যে প্রমাণ গুলো থাকতে হবে, তা হলো–
- রেজিস্ট্রি কৃত দলিল থাকতে হবে।
- আপনি যার ওয়ারিশ তার নামে রেকর্ড বা আপনার নিজ নামে রেকর্ড কিংবা নামজারির খতিয়ান থাকতে হবে।
- প্রতি বছর আপনাকে খাজনা প্রদান করতে হবে।
- যে জমিটির মালিকানা দাবি করছেন সেই জমির দখল আপনার থাকতে হবে।
রেজিস্ট্রিকৃত দলিল কখন হতে কার্যকর হয়
রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯৮৪ এর ৪৭ ধারা অনুযায়ী, দলিলের রেজিস্ট্রেশন এর তারিখের সাথে দলিল কার্যকর হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো রেজিস্ট্রিকৃত দলিল সেই সময় থেকে কার্যকর ধরা হয়, দলিল টি রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন না থাকলে যেই সময় থেকে কার্যকর হতো।
রেজিস্ট্রির তারিখে নয়, একটি রেজিস্টিকৃত দলিল সম্পাদনের তারিখেই কার্যকর হয়।
সম্পাদন রেজিস্ট্রি আইন, ১৯০৮ এর ২৩ ধারা অনুযায়ী কয়েকটি দলিল ব্যাতি রেখে প্রায় সকল দলিল ই সম্পাদনের তারিখ হতে তিন মাসের মধ্যে ই রেজিস্ট্রির জন্য দলিল টি রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। উক্ত আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী জেলা রেজিস্ট্রার প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি এর দশ গুন পযন্ত জরিমানা আদায় করে সাব রেজিস্ট্রার কে দলিল টি রেজিস্ট্রির জন্য আদেশ দিতে পারেন।
অছিয়ত দলিল সম্পাদনের পর যেকোনো সময় ই রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করা যায়। রেজিস্ট্রেশন আইনের ধারা নং ১৭ অনুযায়ী, বায়না পত্র সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয় ও উক্ত আইনেরই ধারা নং ২৬ অনুযায়ী, বিদেশে সম্পাদিত কোন দলিল বাংলাদেশে প্রবেশের তারিখ হতে ৪ মাস এর মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করা যায়।
রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে সম্পাদনের তারিখ হতেই দলিল টি কার্যকর হয়। রেজিস্ট্রি না করা হলে দলিলটির কোনো কার্যকারিতা থাকে না।
ঘোষণা পত্র বা দানের ঘোষণা পত্র দলিলের ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তির দাতা মৌখিক ভাবে গ্রহিতার অনুকূলে সম্পত্তি দান করে থাকেন ও গ্রহিতার অনুকূলে সম্পত্তি দখল অর্পন করে থাকেন। গ্রহিতার অনুকূলে সম্পত্তির দলিল টি যেই তারিখেই রেজিস্ট্রেশন করা হোক না কেন, দান কার্যকর হবে মৌখিক ভাবে দান করার তারিখেই ।
মূল দলিল :
মূল দলিল তুলতে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। মূল দলিল উত্তলন করার জন্য আপনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলের রশিদ জমা দিয়ে মূল দলিল উত্তলন করবেন।
মূল দলিল বের হতে সময় :
দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে দলিলে বালাম লিখা হয়ে গেলে, মূল যে দলিল তা দিয়ে দেওয়া হয়। এই বালাম লিখতে কখনো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে আবার কখনো কয়েক বছরও লাগতে পারে। রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমের সামনে একটি সাইনবোর্ড দেখা যায় সেখানে দেওয়া থাকে মূল দলিল কত সালের বিতরণ হচ্ছে এবং দলিল নাম্বার। মূল দিলের রশিদ জমা দিয়ে আপনি মূল দলিল উত্তলন করে নিতে পারবেন।
দলিলের রশিদ :
মূল দলিলের রশিদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মূল দলিলের রশিদ হারিয়ে গেলে মূল দলিল তুলতে পারবেন না। মূল দলিল এর ফটকপি দিয়েও মূল দলিল উত্তলন করা যায় না। মূল দলিল তুলতে অরজিনাল রশিদ লাগে। দলিল রেজিস্ট্রি করার সাথে সাথে আপনি দলিলের রশিদ নিয়ে নিতে পারবেন।
মূল দলিল উত্তলন করতে কত টাকা লাগবে:
মূল দলিলের পিছনে মূল দলিলের ফি দেওয়া থাকে N ফি O ফি এই ফি টা হচ্ছে অফিস ফি। এই ফি টা অফিসে জমা দিয়ে মূল দলিল উত্তলন করে নিতে পারবেন। কিন্তু মূল দলিল তুলতে দেরি হলে আপনাকে লেট ফি দিতে হবে।
মূল দলিল বিতরণের সময় থেকে এর নিদিষ্ট সময় থাকে বিভিন্ন জায়গা তে এইটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। মূল দলিল নস্ট করার আগে নটিশ দেওয়া হয়। এই নটিশের আগে আপনি মূল দলিল এর রশিদ জমা দিয়ে মূল দলিল তুলে নিবেন।
জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পরে দলিল পাওয়া যায়
জমি রেজিস্ট্রি করার সাথে সাথেই মূল দলিল পাওয়া যায় না। মূল দলিল পেতে বেশ কিছু দিন সময় লাগে। মূল দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে বালাম হওয়ার পরে মূল দলিল পাওয়া যায়। এই বালাম হতে বিভিন্ন জায়গা তে বিভিন্ন রকম সময় লাগে। কোনো অফিস এ দুই বছর আবার কোনো অফিসে ৫ বছর বা ৭ বছর।
জমির দলিল উত্তলন এর নিয়ম
জমির দলিল উত্তলন এর নিয়ম হচ্ছে আপনি একটি জমি রেজিস্ট্রি করার পরে আপনাকে একটা রশিদ দেওয়া হবে সেই রশিদ টি ই হচ্ছে আপনার মূল দলিল পাওয়ার রশিদ।
জমির দলিল এর নকল তোলার নিয়ম
জমির দলিল নকল তোলার নিয়ম হলো আপনি রেজিস্ট্রেশন করার পর আফিসের ভিতরে যারা বালাম লিখার কাজ করে তাদের কে দলিলের নকল তোলার জন্য দলিল নাম্বার ও তারিখ দিবেন তাহলে তারা আপনাকে জমির নকল তুলে দিবে।
মূল দলিলের রশিদ হারিয়ে গেলে থানা তে জিডি করে আপনি সহজে ই মূল দলিল তুলতে পারবেন। জমি রেজিস্ট্রি করার পরে দলিল পেতে এক এক অফিসে এক এক রকম সময় লাগে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
- ফি: জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিভিন্ন ফি লাগতে পারে, যা স্থানীয় সরকারের নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।
- দলিলের ফর্ম: সঠিক ফর্ম পূরণ করা অপরিহার্য, যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
আরও জানুনঃ
- জমির মালিকানা যাচাই করার পদ্ধতি | A Comprehensive Case Study on in Bangladesh
- জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত ২০২৪
- কিভাবে জমি পরিমাপ করা হয়
- জমি কেনার আগে কি কি কাগজপত্র দেখতে হয় ?
FAQ
জমি রেজিস্ট্রেশন করতে কি কি নথি প্রয়োজন?
জমি রেজিস্ট্রেশন করতে সাধারণত প্রয়োজনীয় নথিগুলি হলো: জমির মালিকানা প্রমাণপত্র, ছবি, পরিচয়পত্র এবং রেজিস্ট্রেশন ফি।
জমি রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত মূল দলিল পাওয়া সম্ভব?
না, জমি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মূল দলিল পাওয়া সম্ভব নয়। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ছাড়া জমির মালিকানা আইনি ভাবে স্বীকৃত হয় না।
জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কত সময় লাগে?
সাধারণত, জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।