আজকে আমরা আলোচনা করব Millionaire Scheme নিয়ে। মিলিয়নিয়ার স্কিম মূলত ব্যাংকগুলোর একটি আধুনিক সঞ্চয় পদ্ধতি, যা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চালু হয়েছে। তবে বাংলাদেশে মিলিয়নিয়ার স্কিম প্রথমবার চালু হয়েছিল ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি।
এটি চালু করার মূল লক্ষ্য ছিল মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য সাশ্রয়ী সঞ্চয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উপায় তৈরি করা। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংকই এই স্কিম পরিচালনা করে থাকে।
Millionaire Scheme কি
মিলিয়নিয়ার স্কিম একটি ব্যাংকিং সঞ্চয় পরিকল্পনা, যেখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়মিত ছোট পরিমাণ অর্থ জমা করে একজন গ্রাহক কোটি টাকার মালিক হতে পারেন। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প যা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের একটি চমৎকার উপায়।
মিলিয়নিয়ার স্কিম এর কাজের পদ্ধতি
- গ্রাহক মাসিক বা নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জমা করেন।
- জমাকৃত অর্থের উপর ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সুদের হার প্রদান করে।
- নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সেই অর্থ সুদসহ পরিশোধ করা হয়, যা মোট টাকার পরিমাণকে ১ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে দেয়।
Millionaire Scheme এর বৈশিষ্ট্য
- নিয়মিত সঞ্চয়: এটি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে।
- ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ: সঞ্চয় নিশ্চিত এবং নিরাপদ।
- সুদের সুবিধা: জমার উপর সুদ যুক্ত হওয়ার ফলে মেয়াদ শেষে বড় অঙ্কের অর্থ জমা হয়।
- সাশ্রয়ী: যে কেউ অল্প পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।
Millionaire Scheme কেন জনপ্রিয়?
- ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করার সহজ উপায়।
- শিশুদের পড়াশোনা, বাড়ি কেনা, বা ব্যবসা শুরু করার মতো লক্ষ্য পূরণে সহায়ক।
- দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
Millionaire Scheme কীভাবে কাজ করে?
মিলিয়নিয়ার স্কিম হলো একটি বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত মাসিক জমা ও সুদের উপর ভিত্তি করে গ্রাহককে মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ দেয়।
উদাহরণস্বরূপ:
- যদি আপনি মাসিক ৫,০০০ টাকা সঞ্চয় করেন এবং ১০ বছরের জন্য এটি চালিয়ে যান, তাহলে স্কিম শেষে আপনাকে ব্যাংক একটি বড় অংকের অর্থ প্রদান করবে।
- এখানে ব্যাংক আপনার জমাকৃত অর্থের উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ যোগ করবে, যা সময়ের সঙ্গে বড় পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
কেন Millionaire Scheme আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
- সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি:
নিয়মিত সঞ্চয় আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে। - লভ্যাংশ বৃদ্ধি:
সাধারণ সঞ্চয় হিসাবে টাকা রেখে দিলে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যায়, তার তুলনায় এই স্কিমে সুদের হার বেশি। - নিরাপদ বিনিয়োগ:
ব্যাংকে সঞ্চয় রাখা সবসময় নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিলিয়নিয়ার স্কিম
১. সরকারি ব্যাংকের স্কিম
সরকারি ব্যাংকগুলো সাধারণত কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি স্কিম প্রদান করে, যা মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
২. প্রাইভেট ব্যাংকের স্কিম
বেসরকারি ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে তুলনামূলক স্বল্প মেয়াদী স্কিম অফার করে, যা দ্রুত ফল পেতে চান এমন গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত।
৩. ইসলামী ব্যাংকিং অপশন
ইসলামী ব্যাংকগুলো সুদবিহীন স্কিমের মাধ্যমে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রাহকদের আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে।
মিলিয়নিয়ার স্কিম খোলার ধাপ:
১. ব্যাংক নির্বাচন করুন
প্রথমত, এমন একটি ব্যাংক নির্বাচন করুন যেখানে মিলিয়নিয়ার স্কিম উপলব্ধ রয়েছে। সাধারণত, দেশের প্রধান সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই স্কিম প্রদান করে থাকে, যেমন:
- সোনালী ব্যাংক
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
২. স্কিমের শর্তাবলী জানুন
প্রত্যেক ব্যাংক তাদের স্কিমের জন্য আলাদা শর্তাবলী এবং সুদের হার নির্ধারণ করে। তাই স্কিম খোলার আগে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গিয়ে শর্তাবলী ও সুদের হার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন।
৩. ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করুন
মিলিয়নিয়ার স্কিম খুলতে সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়:
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট (প্রমাণপত্র হিসেবে)
- পাসপোর্ট সাইজ ফটো
- বসবাসের ঠিকানা প্রমাণ (বিদেশী হলে, প্রবাসী প্রমাণপত্র)
- এনআইডি/টিআইএন (ট্যাক্স আইডি)
৪. অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করুন
ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে বা অনলাইনে স্কিম খোলার জন্য আবেদন করুন। সাধারণত, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে হবে, যা ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
৫. বিনিয়োগ শুরু করুন
আপনার প্রাথমিক অর্থ জমা দেওয়ার পর, মাসিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মিলিয়নিয়ার স্কিম এর কিছু বিষয়
১. ব্যাংকের স্কিম অপশনগুলো যাচাই করুন
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়নিয়ার স্কিম অফার করে। প্রতিটি ব্যাংকের স্কিমের মেয়াদ, সুদের হার এবং শর্তাবলী আলাদা হতে পারে।
- কোন ব্যাংক আপনার সঞ্চয়ের লক্ষ্য এবং আর্থিক ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা যাচাই করুন।
- ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে স্কিমের তথ্য ডাউনলোড করুন বা শাখায় গিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করুন।
২. সঠিক মেয়াদ নির্বাচন করুন
মেয়াদ নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ব্যাংক ৫, ১০ বা ১২ বছরের মেয়াদী স্কিম প্রদান করে।
- যদি আপনার লক্ষ্য দ্রুত সঞ্চয় করা হয়, তাহলে ৫ বছরের স্কিম নির্বাচন করুন।
- দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ১০ বা ১২ বছরের স্কিম বেছে নিন।
৩. মাসিক জমার পরিমাণ নির্ধারণ করুন
মিলিয়নিয়ার স্কিমে সফল হওয়ার জন্য মাসিক সঞ্চয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- উদাহরণস্বরূপ, ১০ বছরের মেয়াদের জন্য প্রতি মাসে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা জমা দিতে হতে পারে।
- আপনার মাসিক আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
৪. অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করুন
ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা থেকে বা অনলাইনে স্কিমের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করুন। ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্ত করুন।
৫. একাউন্ট টাইপ নির্বাচন করুন
অনেক ব্যাংক দুই ধরনের মিলিয়নিয়ার স্কিম অফার করে:
- সাধারণ স্কিম: নিয়মিত মাসিক জমা প্রয়োজন।
- লাম্প সাম স্কিম: একবারে বড় অঙ্কের অর্থ জমা দিয়ে শুরু করা যায়।
৬. প্রথম জমা করুন
স্কিম শুরু করতে প্রথম জমার অর্থ ব্যাংকে জমা দিন। এটি হতে পারে এককালীন অর্থ (লাম্প সাম) বা প্রথম মাসের জমার পরিমাণ।
- কিছু ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং সাপোর্ট করে।
৭. প্রতিমাসে নির্ধারিত অর্থ জমা দিন
আপনার স্কিমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিমাসে নির্ধারিত অর্থ জমা দিন।
- ব্যাংক থেকে একটি অটো-ডেবিট অপশন সেটআপ করুন, যা আপনার সঞ্চয়কে আরও সহজ করে তুলবে।
৮. প্রমাণপত্র এবং স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন
স্কিম চলাকালীন আপনার সঞ্চয়ের অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট নিন।
- স্কিমের শেষে, ব্যাংক আপনার টাকা এবং অর্জিত সুদ একত্রে পরিশোধ করবে।
মিলিয়নিয়ার স্কিম খোলার সুবিধা:
- অটোমেটিক পেমেন্ট সিস্টেম:
আপনি চাইলে অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাসিক জমা দিতে পারেন। - কর সুবিধা:
কিছু স্কিমে করছাড় (Tax Exemption) পাওয়া যায়। এটি আপনার বিনিয়োগের জন্য একটি অতিরিক্ত সুবিধা। - গ্যারান্টিড রিটার্ন:
এই স্কিম ঝুঁকিমুক্ত, এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে একটি বড় অঙ্কের রিটার্ন নিশ্চিত। - নিরাপদ সঞ্চয়:
আপনার সঞ্চিত অর্থ একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকে থাকে, যা আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। - স্বপ্ন পূরণের উপায়:
এই স্কিম শিশুদের শিক্ষার খরচ, বাড়ি কেনা, ব্যবসায়।
Millionaire Scheme এর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সুবিধা:
- নিশ্চিত সঞ্চয়।
- দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সুযোগ।
চ্যালেঞ্জ:
- মাসিক জমার দায়বদ্ধতা।
- মাঝপথে স্কিম ভাঙলে কম রিটার্ন পাওয়া।
মিলিয়নিয়ার স্কিমে বিনিয়োগের সেরা কৌশল
যেকোনো স্কিমে বিনিয়োগ করার আগে কিছু কৌশল মেনে চললে আপনি সর্বাধিক লাভবান হতে পারেন।
১. আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
আপনার মূল লক্ষ্য কী বাড়ি কেনা, সন্তানের পড়াশোনা, বা অবসরকালীন সঞ্চয়? লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক স্কিম বেছে নিন।
২. মাসিক বাজেট তৈরি করুন:
আপনার আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে একটি মাসিক বাজেট তৈরি করুন এবং তা অনুযায়ী স্কিমে জমা দিন।
৩. সঠিক সুদের হার খুঁজে বের করুন:
সকল ব্যাংকের অফার যাচাই করুন এবং যেখানে সুদের হার সবচেয়ে বেশি, সেই স্কিমে বিনিয়োগ করুন।
৪. লং টার্ম দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন:
মাঝপথে স্কিম ভাঙার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় স্থির থাকুন। এটি সর্বোচ্চ রিটার্ন নিশ্চিত করবে।
৫. জমার টাইমিং ঠিক রাখুন:
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কিমে যোগ দিন এবং মাসিক জমার সময় মিস করবেন না।
Know More:
- All about Dutch Bangla Bank Credit Card | ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য
- ব্র্যাক ব্যাংক ডিপিএস লাভ কত? | Brac Bank DPS Rate
- How to Open Mercantile Bank DPS | মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ডিপিএস কিভাবে করতে হবে
FAQ
১. Millionaire Scheme কত বছরের জন্য?
স্কিমের মেয়াদ সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়।
২. কীভাবে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়?
সুদের হার ব্যাংকের নীতিমালা এবং বাজারের চলমান হারের উপর নির্ভর করে।
৩. মাঝপথে স্কিম ভাঙলে কী হবে?
মাঝপথে স্কিম ভাঙলে জমার উপর কম সুদ দেওয়া হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে।
৪Millionaire Scheme খুলতে সর্বনিম্ন কত টাকা জমা দিতে হয়?
প্রতিটি ব্যাংকের জন্য পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত মাসে ৫,০০০-৮,০০০ টাকার মতো জমা দিতে হয়।